আরতি
আ = না, রতি = কামনা

যে কার্য করিলে আ-রতি হয়, অর্থাৎ নিষ্কাম অবস্থা হৃদয়ঙ্গম হয় অর্থাৎ মনোরতি নষ্ট হয়, তাহাই প্রকৃত আরতি জানিবেন।

পুরোহিত মহাশয়গণ না জানার জন্য ধারাবাহিক রূপে পঞ্চতত্ত্বের বিষয়গুলির সঞ্চালন করেন না। হস্তের পঞ্চ অঙ্গুলির সাহায্যে মূলাধারস্হ পদ্ম হইতে – পুষ্প, যাহা মূলাধারের বিষয় গন্ধ; স্বাধিষ্ঠানের বিষয় – যাহা শঙ্খের মধ্যস্থিত জল; মণিপুরের বিষয় – পঞ্চ প্রদীপস্থ তেজ অর্থাৎ আলোক; অনাহতের বিষয় – স্পর্শ, যাহা চামররূপে বায়ু এবং বিশুদ্ধাখ্যের বিষয় শব্দ, যাহা শঙ্খ বা ঘন্টার নিনাদ, ইহা দিগকে লইয়া হস্তের সাহায্যে একবার ঊর্দ্ধ-দিকে, একবার নিম্নদিকে সঞ্চালন করা হয়। এইরুপ করিলেই আরো কি হয় অর্থাৎ মনের রতি অর্থাৎ ইচ্ছার নাশ হয় বা আ-রতি হয়।

পুরোহিতগন অনভিজ্ঞতার জন্য এরূপ করিয়া থাকেন কিন্তু পূর্বকালে ঋষিগণ মূলাধারস্থিত স্থিরপ্রাণকে প্রতি চক্রের বিষয়গুলিকে আকর্ষণ করিয়া ঊর্দ্ধে লইয়া অর্থাৎ অজ্ঞাচক্রে লইয়া গিয়া পূরক করিতেন এবং ওই সকলকে প্রতিচক্রে মন সংযত করিয়া নামিতেন অর্থাৎ রেচক করিতেন। এই প্রকরণ একবার দুইবার করিলে আরতি হয় না, অনেকক্ষণ এই ভিতরের আরতির প্রকরণ করিয়া প্রাণ মনের স্থিরতা সম্পাদন করিয়া আনন্দে নিমগ্ন থাকিতেন।

যোগাচার্য শ্রী পঞ্চানন ভট্টাচার্য মহাশয়ের হুগলি জেলার বলাগড় নিবাসী শিষ্য শ্রী শ্রীশচন্দ্র মুখোপাধ্যায়ের শিষ্য শ্রী ঈশানীতোষ চট্টোপাধ্যায় প্রণীত “যোগজীবন” গ্রন্থের শারীরিক বৈজ্ঞানিক ধর্ম অধ্যায় হইতে গৃহীত।

সনাতন ধর্ম অনুযায়ী বর্তমানে পূজা পাঠ এবং তার ফলাফল কাহারো অজানা নাই। ধর্মাচরণ এবং পূজা পাঠ করিয়া প্রকৃত ফল লাভ না করিতে পারিয়া অধিকাংশ মানুষই পূজা পাঠ বিমুখ হইয়া উঠিয়াছেন। নিষ্ফল পূজা পাঠের কারণ এই লেখা হইতেই বুঝিতে পারা যায়। মন্ত্রের সহিত অন্তরমুখীন ক্রিয়া না করিলে পূজা সার্থক হয় না।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

error: Content is protected !!