লাহিড়ি মহাশয় পুনঃ পুনঃ সকলকে স্মরণ করাইয়া দিতেন — “কসকে প্রাণায়াম করনা চাহিয়ে”। প্রতিদিন নিয়মিত দাঁতে দাঁত চাপিয়া প্রাণ কর্ম করা উচিত। বল পূর্ব্বক প্রান কর্ম করিলে সত্ত্বর প্রাণ স্থির হইয়া যায়।
যোগীরাজ বলিতেন — এই যোগ সাধন করিলে তবেই মানুষের জীবন সুন্দর ও মহিমাময় হয় আত্মার যে মান তাহার প্রতি হুঁস হয় তখন প্রকৃত মানুষ হয়।
কিন্তু হৃদয় মন্দিরের প্রধান ফটক খুলিবে কেমন করিয়া? যোগীরাজ বলিয়াছেন — “উলট পবনকা ঠোকর মারে খোলে দরওয়াজা।”
অর্থাৎ যে শ্বাসরূপী পবন উপর হইতে নিম্নগামী হইতেছে অর্থাৎ বহির্ম্মুখী হইতেছে তাহাকে অন্তর্ম্মুখী করিয়া ঠোকর ক্রিয়া রূপ কৌশলের দ্বারা সেই হৃদয় মন্দিরের প্রধান ফটক খুলিতে হইবে। আবার লিখিয়াছেন — “ওঁ জোরসে ধক্কা দেনেসে তব দরওয়াজা খুলেগা”। — ওঁকার ক্রিয়ার দ্বারা হৃদয়ে জোরে ধাক্কা দিলে তবেই হৃদয় মন্দিরের দরজা খুলিয়া যায়। আরও লিখিয়াছেন — “ওঁ জেয়াদা জোরসে হৃদয়মে ঠোকর মারনে সে আপসে আপ নেশা হোয় ও ঠহর জেয়াদা হোয়।” পুনরায় লিখিয়াছেন — “জোরসে ওঁমে ঠোকর মারনে জেয়াদা স্হির হোতা হয়।”
ঠোকর ক্রিয়ারূপ ওঁকার ক্রিয়া বলপূর্ব্বক করিতে থাকিলে হৃদয় গ্রন্থি ভেদ হয় আর তখনই কঠিন দরজা খুলিয়া যাওয়ায় অজ্ঞান দূরীভূত হয়।
এই ঠোকর ক্রিয়া করিতে থাকিলে আপনা হ ইতেই গাঢ় নেশা হইবে এবং স্থির ঘরে অধিক সময় অবস্থান হইবে। এই অবস্থা প্রাপ্ত হইলে মন পরের দুঃখে কাতর হয়।
যোগীরাজ পৌত্র সত্যচরণ লাহিড়ী
দ্বারা সঙ্কলিত ও শ্রী অশোক কুমার চট্টোপাধ্যায় দ্বারা গ্রন্থিত পুরাণ পুরুষ যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী নামক পুস্তকের দ্বিতীয় সংস্করণ হইতে গৃহীত।
যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী মহাশয় এক্ষেত্রে গুরুবক্ত্রগম্য প্রথম ক্রিয়া প্রাণায়াম, দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ক্রিয়ার প্রসঙ্গে ক্রিয়াত্মক দিক নির্দেশ দিয়াছেন। রোগীরাজের এই সমস্ত উপদেশাবলী হইতেই ক্রিয়াযোগ বিষয়ে তাঁর গভীর জ্ঞান এবং অনুভূতির প্রকাশ পাওয়া যায়। মনে হয় ত্রিকালদর্শী লাহিড়ী মহাশয় তাঁর জীবদ্দশাতেই বুঝিতে পারিয়াছিলেন যে ভবিষ্যতে ক্রিয়াযোগ নিয়া নানা ধরনের বিভ্রান্তি শুরু হইতে পারে এবং সেই অবস্থার নিরাকরণের জন্য তিনি তার ২৬ টি ডায়েরির মাধ্যমে ক্রিয়াযোগ সম্পর্কিত প্রায় সমস্ত কিছুই লিপিবদ্ধ করিয়া গিয়াছেন।