তন্ত্রে পার্বতী মহাদেবকে মন্ত্র শব্দের প্রকৃত অর্থ জিজ্ঞাসা করায় মহাদেব বলিয়াছেন :-
শিবাদিকৃমি পর্য্যন্তং প্রাণিনাং প্রাণবর্দ্ধনম্।
নিঃশ্বাসঃ শ্বাসরূপেন মন্ত্রোহয়ং বর্ত্ততে প্রিয়ে।।
— কুলার্ণবতন্ত্র।
অর্থাৎ শিবাদি কৃমিপর্য্যন্ত প্রাণিগনের শ্বাসরূপে যে নিঃশ্বাস বহিতেছে তাহাই মন্ত্র। ইহার দ্বারাই স্পষ্ট সপ্রমাণ হইতেছে যে, একমাত্র প্রাণবায়ুই মন্ত্র। তন্ত্রে যে সকল বীজ মন্ত্র আছে তৎসমুদায়ের অক্ষরে অক্ষরে প্রচ্ছন্নভাবে প্রাণবায়ুর বিবিধ ক্রিয়া নিহিত আছে। ষড়াম্নায়েও ইহা দেখিতে পাওয়া যায়। অতএব সেই ক্রিয়া সকলই মন্ত্র। মনুষ্য ঐ সকল ক্রিয়ার অনুষ্ঠান করিয়া, প্রথমে প্রাণায়াম-পরায়ণ এবং তৎপরে বায়ু স্থির হইলে মোক্ষ-পরায়ণ হইয়া ওই বায়ুকে স্হিরত্বের শক্তির দ্বারা সাঙ্কেতিক স্থানে রাখিলেই মন্ত্র চৈতন্য হয়। সেই সাঙ্কেতিক চিহ্নই বীজ। যেমন ক্রীং = (ক = মস্তক, র = বহ্নিবীজ, চক্ষু, ঈ = শক্তি, ং = বিন্দু,) স্হির বায়ুকে শক্তিপূর্বক মস্তকে লইয়া গিয়া চক্ষুতে রাখিলে, ওঙ্কার ধ্বনি শোনা যায় এবং বিন্দুকে স্থির ভাবে দেখা যায়। সেই অব্যক্ত পরাশক্তিকে সহজে জানিবার উপায় সকল তন্ত্রের মধ্যে রইয়াছে। গুরুর অভাবে তন্ত্রের মন্ত্র ও ক্রিয়া সকল বিপরীতভাবে অনুষ্ঠিত হইতেছে। উপযুক্ত মন্ত্র সকলকে যিনি ঘৃণা করেন, তাঁহার পাপ ও নরক হয়। মন্ত্রের তাৎপর্য্য অবগত হইয়া তাহার কার্যের অনুষ্ঠানে যত্নবান হওয়া উচিত।
যোগাচার্য পঞ্চানন ভট্টাচার্য মহাশয় লিখিত ধর্ম ও পূজাদি মীমাংসা নামক পুস্তকের তৃতীয় বইমেলা, ২০১৫ সংস্করণ হইতে গৃহীত।
যোগীরাজ শ্যামাচরন লাহিড়ী মহাশয়ের প্রধান শিষ্য যোগাচার্য্য পঞ্চানন ভট্টাচার্য্য মহাশয় তন্ত্রের মন্ত্র সমূহের সহিত ক্রিয়া যোগের যে গভীর সম্পর্ক রহিয়াছে তাহার প্রাঞ্জল ব্যাখ্যা দিয়েছেন। বুঝা যাইতেছে যে ক্রিয়াহীন মন্ত্র শক্তিহীনতা দোষে দুষ্ট হইয়া পড়িয়াছে। ক্রিয়ান্বিতদের জন্য এই ব্যাখ্যাটি অতি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় বলিয়া বিবেচিত হইবে বলিয়া আশা করা যায়।