প্রথমে ক্রিয়া করিয়া একটি চক্ষু দর্শন, পরে ঐ চক্ষুর মধ্যে জ্যোতির্ময় কুটস্হ, তাহার মধ্যে আকাশ, ঐ আকাশই ব্ৰহ্ম উহাকে সৰ্ব্বত্রে দেখিয়া ব্ৰহ্মজ্ঞান; এই আহুতি ইহা হইলে প্রাণায় স্বাহা হইল।
প্রাণাবায়ুকে সম্পূর্ণরূপে টানায় সর্ব শরীরে জোর পড়িল, ইহারই নাম ধ্যান। সেই ধ্যানেতে থাকিলে একপ্রকার শব্দ হয় যাহাকে ওঁকারধ্বনি কহে, তাহাতে মন স্থির হইলেই সকলের দিকে সেই ব্রহ্মস্বরূপ আকাশ সর্বত্রে দেখিলেই ধ্যান স্বাহা, পরে উহার টান নীচের দিকে পড়ায় অপান, ঐ অপানে থাকিলে কথা কহিতে ইচ্ছা হয় না; কথা না কহিলেই স্বাসরোধ থাকে, শ্বাসরোধ থাকিলেই কেবল শরীর ও আকাশ থাকিল; সেই আকাশে লীন হইলেই অপানায় স্বাহা।
এই প্রাণ, ব্যান ও অপান এই তিনের স্থিরে সমান; সেই সমানে থাকিতে থাকিতে মনে অনুভব হয়, সেই মনই কূটস্থ ব্ৰহ্ম দেখে: যিনি বৃহৎ কুটস্থ হইতেছেন; সেই বৃহৎ কূটস্থ দেখিলেই বিদ্যুৎ দেখা যায় সেই বিদ্যুৎ আকাশে লয় হয়; সেই লয়ের নাম সমানায় স্বাহা।•••••
যোগীরাজকৃত তৈত্তিরীয় উপনিষদের মন্ত্র ও ব্যাখ্যা গ্রন্থের তৃতীয় অনুবাকের পঞ্চম মন্ত্রের ৩ নং ব্যাখ্যা হইতে অংশবিশেষ উদ্ধৃত।
অধিকাংশ পুরোহিতগন অজ্ঞতাবশতঃ পূজনীয় দেবতাকে নৈবেদ্য অর্পণ করিয়া তৎপরে বামহস্তে গ্রাসমুদ্রা করিয়া দক্ষিণহস্তে প্রাণ, অপান, সমান, উদান, ব্যান প্রভৃতি পঞ্চমুদ্রা “ওঁ প্রাণায় স্বাহা, ওঁ অপানায় স্বাহা, ওঁ সমানায় স্বাহা, ও উদানায় স্বাহা, ও ব্যানায় স্বাহা।” এই মন্ত্র পাঠ করেন। অভ্যন্তরীণ ক্রিয়া সমূহ না জানা থাকায় দেবতাকে নৈবেদ্য নিবেদন একটি বাহ্যিক ফলহীন প্রক্রিয়া হইয়া থাকিয়া যায়। যোগীরাজ শ্যামাচরণ লাহিড়ী এই বিষয়টির সহিত আভ্যন্তরীণ (গুরুবক্ত্রগম্য) যৌগিক ক্রিয়ার সম্বন্ধের উপর আলোকপাত করিয়া প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাখ্যা করিয়া দিয়াছেন।