———————————-
শ্রীশ্রী শ্যামাচরণ বড় নির্বিবাদী পুরুষ ছিলেন । তিনি পৈত্রিক বিষয়ের কোন অংশ না লইয়া নিজে সরকারী সামরিক পূর্ত্ত (এনজিনিয়ারিং) বিভাগের কেরাণী হইয়া সংসারের সব ভার গ্রহণ করেন। তিনি চিরকাল কঠিন পরিশ্রম করিয়া যা অর্জন করিয়াছেন তাহাতেই সংসার পালন করিয়া যথাসাধ্য গরীব দুঃধীর দুঃখ মোচন করিতেন। তাহার দানের বিষয় কচিৎ কেহ জানিতে পাইত । অতি গুপ্ত ও নানা কৌশলে তিনি অপরের সাহায্য করিতেন। তাহাদ্বারা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা, বাংলা ভাষার শিক্ষা প্রচার, প্রভৃতি নানা জনহিতকর কর্ম ঘটিয়াছে। এমন প্রমাণও পাওয়া যায় তিনিই হিন্দী ও বাংলাতে ক্ষুদ্রাকার অসংখ্য শ্রীমদ্ভগবদগীতা বিনামূলো ভারতের সর্বাত্র প্রচার করেন। সিপাহী বিদ্রোহের পূর্ব্ব হইতে এই গীতা প্রচারের সূচনা হয় এবং তখন তিনি দীক্ষিত ও হন নাই। লক্ষাধিক গীতা, তিনি “প্রচার” করিয়াছেন এইরূপ বিশ্বাসের হেতু ও প্রমাণ পাওয়া যায়। সমস্ত ভারতে গীতা প্রচার ও গীতার আধ্যাত্মিক ভাব প্রচার তাঁহার শ্রেষ্ঠদান। তিনি চাকরি করিতে করিতে আলমোরার রাণীক্ষেত অঞ্চলে দ্বারাহাটে গমন করেন এবং সেখান হইতে পাণ্ডুখুলি ভট্ কোট রেনজের গুহায় সহসা সৎগুরু লাভ করেন। তাহার দীক্ষার সময়ে ঐ অঞ্চল নৈনীতাল জেলার অন্তর্গত ছিল। যে মহাপুরুষের নিকট তিনি দীক্ষা পাইলেন তাহাকে ঈশ্বর পুরুষ বিশেষ বলা চলে । ইহাকে তিনি বাবাজী বলিতেন। গুরুর হুকুমে তিনি গৃহস্থাশ্রমেই রহিলেন এবং স্বয়ং সর্ব্বপ্রকার সিদ্ধিলাভ ও যোগশাস্ত্রের সমস্ত চরম অবস্থা তিনি লাভ করেন। পরে ইনি বহু লোককে দীক্ষা দান করেন।————————————
তিনি শেষ জীবনে পেনসন লইয়া ও আরও কয়েকটী বাড়ী, করিয়া তাহা ভাড়া দিয়া নিশ্চিন্ত প্রাণে নানা গ্রন্থের আধ্যাত্মিক ব্যাখ্যা করিয়া ক্রিয়াবানদের মধ্যে বিতরণ করেন। ইহা তাঁহার ভারতের সংস্কৃতিতে এক অপূর্ব দান। ভারতের সাহিত্যে এই দানের গৌরব এখনও সুরক্ষিত হয় নাই।
ভারতের বর্তমান দুরবস্থার কথা ভাবিয়া একস্থানে তিনি আক্ষেপ করিয়া বলিতেছেন “এ কলিকালে গোপন করিতে করিতে একেবারে গুহ্য বস্তু হইয়া গিয়াছে “।
শ্রীশ্রী যোগীরাজ পৌত্র শ্রী আনন্দমোহন লাহিড়ী প্রণীত “পত্রাবলীতে ক্রিয়া ও ক্রিয়া বান” পুস্তকের ভূমিকা হইতে অংশ বিশেষ কোনরূপ পরিবর্তন না করিয়া হুবহু উদ্ধৃত হইল।
এখন প্রশ্ন উঠিতে পারে উক্ত ভূমিকা পুনঃ উদ্ধৃত করিবার কারন কি হইতে পারে? যোগীরাজের ব্যক্তিগত জীবন ইতিহাস হইতে জানিতে পারা যায় যে তিনি বহু পুস্তক লিখিয়া মুমুক্ষু মানুষের মধ্যে বিনামূল্যে বিতরণ করিতেন। তাহাতে ধনী গরিব নির্বিশেষে সকলেরই উপকার হইত। কিন্তু আজকাল অনেকেই ক্রিয়াযোগের নামে যোগীরাজের লেখা সমূহ হইতে নকল করিয়া পুস্তক লিখিয়া এবং সেই সমস্ত পুস্তকের উচ্চমূল্য ধার্য করিয়া মহানন্দে প্রচুর টাকা উপার্জন করিতেছেন, ফলতঃ গরিব ক্রিয়ান্বিত অথবা মুমুক্ষু মানুষেরা উচ্চমূল্যের কারণে উক্ত পুস্তক সমূহ ক্রয় করা হইতে বিরত থাকিতেছেন। ইহাতে শ্রী শ্রী রোগীরাজের ইচ্ছা এবং মহৎ উদ্দেশ্য সকল প্রতিকূলতার সম্মুখীন হইয়া ভুলুন্ঠিত হইতেছে বলিয়া অনুভূত হইতেছে।