ক্রিয়াযোগ কেন গুরুমুখী সে বিষয়ে কিছু আলোচনা করতে চাই। বর্তমানে সারা পৃথিবী জুড়ে বহু মানুষই ক্রিয়া যোগের অভ্যাস করেন। তাদের মধ্যে কেউ সরাসরি গুরুর কাছ থেকে ক্রিয়া পেয়েছেন, কেউ সংস্থার মাধ্যমে দলে ক্রিয়া পেয়েছেন। কিন্তু বিশেষ কয়েকটি ব্যতিক্রম ছাড়া অধিকাংশ ক্ষেত্রে ক্রিয়াযোগের কৌশল অভ্যাস করে বহু ক্রিয়ান্বিতই কৃতকার্য হতে পারছেন না এবং অবশেষে হতাশ হয়ে এই পথ থেকে সরে আসছেন বা পথ বদলে নিচ্ছেন।
পূর্বে যে সমস্ত ক্রিয়াযোগ সিদ্ধ গুরুরা ক্রিয়াযোগ দান করতেন তারা “অঙ্গ প্রায়শ্চিত্য” স্বরূপ তামা তুলসী গঙ্গাজল সামনে রেখে মন্ত্রগুপ্তির শপথ করিয়ে ৫ টাকা গ্রহণ করতেন(এই ব্যবস্থা স্বয়ং যোগীরাজ লাহিড়ী মহাশয় গৃহীদের জন্য তার গুরু বাবাজি মহারাজের সম্মতিক্রমে ব্যবস্থা করেছিলেন এবং ওই টাকা বাবাজি মহারাজ লাহিড়ী মহাশয়ের কাছ থেকে নিয়ে সাধু সেবায় খরচ করতেন। অবশ্য এই ব্যবস্থাটি সম্পর্কে লাহিড়ী বাবার জীবনী থেকে অনেকেই জ্ঞাত আছেন) এবং ক্রিয়া দানের মাধ্যমে জ্ঞানচক্ষু উন্মিলিত করানোর পর শিষ্যের “তিন জন্মের দায়ভার” গ্রহণ করতেন। তৎসহ শিষ্যের ক্রিয়াযোগ অভ্যাসের প্রতি প্রতিনিয়ত প্রখর দৃষ্টি রাখতেন, প্রয়োজনে বহু ক্ষেত্রে দেখা গেছে গুরু তাঁর যোগবলে শিষ্যের মধ্যে আবিষ্ট হয়ে শিষ্যের ক্রিয়ায় উন্নতি ঘটাতেন। ফলতঃ ক্রিয়াযোগী ক্রিয়ায় অতি দ্রুত উন্নতি লাভ করতেন এবং ঈশ্বরানুভূতি লাভ করে কৃতার্থ হতেন।
কিন্তু বর্তমানকালে ক্রিয়াযোগ দানের নামে কিছু তথাকথিত গুরু এবং সংস্থা লাহিড়ী মহাশয় দ্বারা ব্যবস্থিত প্রথার মূলচ্ছেদ করে, ক্রিয়াযোগ দান প্রক্রিয়াটি একটি অর্থ উপার্জনের সুলভ ব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেছেন। ফলতঃ বহু মানুষই ক্রিয়াযোগ গ্রহণ করার পরেও কোনরকম আত্মউন্নতি না করতে পেরে পথভ্রষ্ট হচ্ছেন।
স্বয়ং যোগীরাজের মনুসংহিতার নিম্নলিখিত ব্যাখ্যা হতে বিষয়টি আরো পরিস্কৃত হবে।
যং বদন্তি তমোভূতামুর্খাধর্ম্মমতদ্বিদঃ।
তৎপাপং শতধা ভূত্বা তদক্তৃননুগচ্ছতি।
অক্রিয়াবান অন্ধকারে থাকিয়া যে উপদেশ দেয় তাহাতে যে পাপ হয় সেই পাপ শতগুণ হইয়া উপদেশদাতার হয়।
মনুসংহিতা ১২ অধ্যায়ের ১১৫ নং শ্লোকের যোগীরাজকৃত ব্যাখ্যা দ্রষ্টব্য।
অর্থাৎ উক্ত প্রকারে যিনি ক্রিয়া নেন এবং যিনি ক্রিয়া দেন। উভয়ই পাপের ভাগী হ’ন।
উল্লেখযোগ্য যে, নিজ সিদ্ধ গুরুর কাছ থেকে আদেশ না পাওয়া পর্যন্ত্য বা মহাগুরুদের কাছ থেকে অন্য কোনভাবে নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত কোন ক্রিয়ান্বিতই ক্রিয়াযোগ দান করার অধিকারপ্রাপ্ত হ’ন না। এই ধরনের তথাকথিত ক্রিয়াযোগী গুরুদের কাছ থেকে দীক্ষা নিলে যা হয় তা পূর্বেই বলা হয়েছে।
এক্ষণে আমরা লাহিড়ী বাবার পত্রাবলী হইতে একটি পত্রের উল্লেখ প্রমাণ স্বরূপ দাখিল করিব। নিচের লিংকে ক্লিক করিয়া আপনারা উক্ত পত্রটি অবলোকন করিতে পারিবেন।
যোগীরাজের পত্র হইতে প্রাণায়াম বিধি